Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

আফ্রিকা মহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস

মানবসভ্যতার ইতিহাসে আফ্রিকা মহাদেশের স্থান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানবজাতির উদ্ভবস্থল হিসেবে আফ্রিকাকে ধরা হয়। এখানেই প্রথম শিকারি মানুষ ও কৃষি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে, এবং এখান থেকেই মানব সমাজ ধীরে ধীরে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। তবে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, মরুভূমির বিস্তার এবং উপকূলের অসুবিধার কারণে আফ্রিকার ভেতরের অঞ্চল দীর্ঘ সময় বিশ্বের উন্নত সভ্যতাগুলোর সাথে বিচ্ছিন্ন থেকেছে।

আফ্রিকা মহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস

 

 

সাহারার প্রভাব ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা

নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতি বিস্তার লাভের পর থেকে সাহারার দক্ষিণে আফ্রিকার ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তার ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতায়।

সাহারা মরুভূমি উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে এক বিশাল প্রাচীরের মতো ভূমিকা রাখে।

ফিনিশীয় নাবিকেরা চেষ্টা করলেও আফ্রিকার গভীরে তারা পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিল।

 

আফ্রিকার অভ্যন্তরের সম্ভাবনা বাণিজ্য

যদিও প্রবেশ কঠিন ছিল, তবুও আফ্রিকার অভ্যন্তরভাগ মানুষের বসবাসের অযোগ্য ছিল না।

বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় জনগণ কৃষিকাজে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিল।

 

প্রাচীন নদী সভ্যতার ভূমিকা

পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দীর্ঘ নদী ছিল যোগাযোগ ও কৃষির মূল ভিত্তি। যেমন:

এই নদীগুলো দিয়ে আফ্রিকার প্রাচীন অধিবাসীরা বিস্তৃত অঞ্চলে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখত এবং কৃষিকাজ ও বাণিজ্য পরিচালনা করত।

 

শিকারি সংস্কৃতি থেকে কৃষি সমাজে উত্তরণ

২০-২৫ হাজার বছর আগে আফ্রিকায় আধুনিক শিকারি মানুষ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ছিল বরফ যুগ, আর সাহারা মরুভূমি তখনও ছিল তৃণভূমি।

কিন্তু বরফ যুগ শেষে উত্তর আফ্রিকার জলবায়ুতে বড় পরিবর্তন আসে—সাহারার তৃণভূমি ক্রমে মরুভূমিতে রূপ নেয়।

এর পর থেকেই সাহারার দক্ষিণের আফ্রিকা কার্যত বিশ্বের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে

 

জাতিগত বিভাজন

আফ্রিকা মহাদেশে নানা জাতি ও ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর বসবাস দেখা যায়।

সাহারার দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতা

উত্তর আফ্রিকার উচ্চতর সংস্কৃতির কিছু প্রভাব সাহারার দক্ষিণে পৌঁছালেও, নিম্ন আফ্রিকা কার্যত সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। এর ফলে মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণকায় মানুষরা এশিয়া-ইউরোপের উন্নত সভ্যতা থেকে তেমন কোনো উপকার পায়নি।

 

ব্রোঞ্জযুগ লৌহযুগের সীমাবদ্ধতা

ব্রোঞ্জযুগ ও লৌহযুগের সভ্যতা সাহারার দক্ষিণে প্রসারিত হয়নি।

 

ট্রাইব সমাজ রাজনৈতিক সংগঠন

আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসীরা ট্রাইব সমাজে সংগঠিত ছিল।

 

ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিবর্তন

আদি ট্রাইব সমাজে ছিল যাদুবিশ্বাস টোটেম অনুষ্ঠান। কিন্তু উত্তর আফ্রিকার সভ্যতার প্রভাবে—

 

উত্তর আফ্রিকার প্রভাব প্রাচীন বাণিজ্য

মিশর, দক্ষিণ আরব ও ফিনিশীয়রা আফ্রিকার অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল মূলত সম্পদের খোঁজে।

ধাতু শিল্প, কাঠ খোদাই প্রভৃতি কারিগরি বিদ্যা হয়তো মিশর থেকেই কৃষ্ণ আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করে।

 

রোমান যুগ এক্সাম রাজ্য

রোমান যুগে বর্তমান ইথিওপিয়ার এক্সাম রাজ্য বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে।

 

ইসলাম উত্তর আফ্রিকার পরিবর্তন

অষ্টম শতাব্দীতে মুসলমানরা উত্তর আফ্রিকা জয় করলে বারবার ও আরবরা সাহারা অতিক্রম করে দক্ষিণ ও পশ্চিম আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে।

 

প্রাচীন আফ্রিকান সমাজের মূল বৈশিষ্ট্য

আফ্রিকার প্রাচীন অধিবাসীরা দীর্ঘ সময় বিশ্বের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় উচ্চতর সভ্যতায় উত্তরণ ঘটাতে পারেনি।

 

 

 

 

নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের সক্ষমতা

যদিও আফ্রিকার সাহারার দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন বিশ্বের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তবুও যখনই তারা কোনো নতুন কলাকৌশল বা প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, তখনই তারা সেটিকে আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

 

টমটম বা ঢাকের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ

আফ্রিকার কৃষ্ণ অধিবাসীরা উদ্ভাবনী শক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছে তাদের টমটম বা ঢাক বাজিয়ে খবর পাঠানোর পদ্ধতিতে

 

 

 

আফ্রিকা মহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, বিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে তারা হয়তো উন্নত সভ্যতায় দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে পারেনি, কিন্তু কখনোই স্থবির ছিল না। তাদের জীবনযাত্রায় ছিল অভিযোজন, সংগ্রাম এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের দক্ষতা। সাহারার দক্ষিণে কৃষ্ণ আফ্রিকান সমাজ নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতিতে আবদ্ধ থাকলেও, লোহার ব্যবহার, রাজনৈতিক সংগঠনের প্রাথমিক ধাপ, ধর্মীয় চর্চা এবং ঢাকের মাধ্যমে দূরবর্তী যোগাযোগ—সবই মানব সমাজের ইতিহাসে এক অনন্য অবদান। তাই আফ্রিকার প্রাচীন ইতিহাস কেবল অনুন্নত সমাজের চিত্র নয়, বরং মানব সৃজনশীলতার ও অভিযোজন ক্ষমতার এক অনবদ্য দলিল।

Exit mobile version