আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আসিরীয় সংস্কৃতি , স্থাপত্য ও শিল্প
আসিরীয় সংস্কৃতি , স্থাপত্য ও শিল্প
আসিরীয় সংস্কৃতি , স্থাপত্য ও শিল্প
আসিরীয় সংস্কৃতি
আসিরীয় সাম্রাজ্য ছিল সমরবাদী। এ রাজশক্তির কথা আগেই বলা হয়েছে। এ যুগে তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বা সাংস্কৃতিক বিকাশ আশা করা যায় না। তথাপি সামরিক প্রয়োজনে আসিরীয় যুগেও কিছু কিছু বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। আসিরীয়রা সম্ভবত বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রীতে বিভক্ত করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। ভূ-পৃষ্ঠকে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের ধরনে ভাগ করে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতিও সম্ভবত তারা আবিষ্কার করেছিল।
তারা পাঁচটি গ্রহ আবিষ্কার করেছিল ও তাদের নামকরণ করেছিল। তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগে থেকে গ্রহণকাল নির্দেশ করতেও পারত। সৈন্যদের স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনে সে যুগে চিকিৎসাবিদ্যা ও ভেষজবিদ্যার চর্চাও হয়েছিল। এ যুগে পাঁচ শতাধিক উদ্ভিজ্জ ও খনিজ ওষুধের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের গুণাগুণ ও ব্যবহারপদ্ধতি লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
বিভিন্ন রোগের লক্ষণের বিবরণও লিপিবদ্ধ করা হযেছিল। সাধারণত রোগের কারণকে প্রাকৃতিক বলেই মনে করা হত তবে যাদুমন্ত্র প্রভৃতির সাহায্যে ভূত-প্রেতকে বিতাড়িত করাকেও চিকিৎসার অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হত।
আসিরীয় স্থাপত্য ও শিল্প
নিজেদের গৌরবগাথা বৃদ্ধি ও প্রচারের উদ্দেশ্যে আসিরীয় সম্রাটগণ বিশাল বিলাসপূর্ণ প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। খোসাবাদে অবস্থিত সারগনের প্রাসাদ সম্রাটের শৌর্য ও ক্ষমতার নিদর্শন। উঁচু চাতালের ওপর অবস্থিত, পুরু ও ভারি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত প্রাসাদটি একটি দুর্গবিশেষ। এর মধ্যে অবস্থিত ছিল রাজকীয় ভবনসমূহ, রাজকীয় অশ্বশালা, একটি মন্দির ও একটি জিগুরাট। প্রাসাদের প্রতিটি তোরণ ছিল ব্যবিলনীয়দের মতো খিলান-শোভিত।
প্রাসাদের প্রধান তোরণগুলোর দুপাশে নির্মিত ছিল প্রকাণ্ড মনুষ্যমস্তক বিশিষ্ট ডানাওয়ালা পাথরের তৈরি ষাঁড়দ্বয়। মানুষ বা পশুর মূর্তি নির্মাণে আসিরীয়রা তাদের শারীরবিদ্যা সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞানের পরিচয় দান করত। প্রাসাদের দেয়ালে অঙ্কিত রিলিফ চিত্রে আসিরীয়রা তাদের নির্মম ও নিষ্ঠুর চরিত্রের পরিচয় দান করত। বেশির ভাগ চিত্রেই ছিল যুদ্ধ ও পশু শিকারের দৃশ্য। মনুষ্যচিত্রগুলি থেকে পশুচিত্রগুলি ছিল অপেক্ষাকৃত বাস্তবধর্মী।
মনুষ্যচিত্রগুলো অধিকাংশ প্রকাণ্ড মস্তকবিশিষ্ট অনড় ও নিষ্প্রাণ। অন্যদিকে পশুচিত্রগুলি তাদের চলমান ভঙ্গি ও নিষ্ঠুর অথবা ভয়ার্ত রূপ নিয়ে অধিকতর বাস্তবধর্মী। আসিরীয়দের অধিকাংশ চিত্রে ঘোড়া ও সিংহের মূর্তি দেখা যায়, তবে মাঝে মাঝে অন্যান্য পশু অর্থাৎ গাধা, কুকুর, হরিণ, ছাগল ও বিভিন্ন ধরনের পাখির চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। আসিরীয় রাজাদের অতীত ইতিহাস সংরক্ষণের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখা গেছে।
রাজা আসুরবানিপাল ২২ হাজারেরও অধিক কাদা মাটির লিপির পাত সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর তৈরি গ্রন্থাগারে এগুলো সংরক্ষিত ছিল। সুমেরীয়দের প্রার্থনার সংগীত, ধর্মীয় অনুষ্ঠানরীতিসমূহ, ব্যাকরণ ও চিকিৎসাবিধিসমূহ এই লাইব্রেরিতে লিপিবদ্ধ ছিল।
এ ছাড়া ছিল অসংখ্য চিঠিপত্র, ব্যবসাসংক্রান্ত কাগজপত্র এবং সামরিক অভিযানের বিবরণ। রাজা নিজে তাঁর আত্মজীবনীও লিখে গেছেন। এগুলো প্রত্যেকটি আসিরীয়দের ইতিহাসের মূল্যবান সূত্ররূপে বিবেচিত হয়।
আরও দেখুন :