আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ক্লডিয়ান রাজবংশ। ইম্পেরিয়াল রোমের প্রথম রাজবংশ, যার সূচনা ১৯ আগস্ট, ১৪ খ্রিস্টাব্দে অগাস্টাসের মৃত্যুর পর। ৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই বংশ টিকে ছিল। চারজন সম্রাট এসময় রাজত্ব করেন।
ক্লডিয়ান রাজবংশ
কালিগুলার মৃত্যুর পর সিনেট পরবর্তী শাসক ঠিক করতে আলোচনায় বসল। প্রথমে রিপাবলিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বললেও দ্রুতই সিনেটরেরা নিজেদের নাম রাজা হিসেবে প্রস্তাব করতে থাকলেন। এদিকে প্রিটোরিয়ান গার্ড নিজেরাই সম্রাট বেছে নিল। তিনি কালিগুলার চাচা আর টিবেরিয়াসের ভ্রাতুষ্পুত্র ক্লডিয়াস। সেনাদের চাপে সিনেট তার নিয়োগ বৈধতা দিতে বাধ্য হল। ক্লডিয়াসের সৎ ছেলের নাম ছিল নিরো। ক্লডিয়াসের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ব্রিটেনে রোমের আগ্রাসন। ১৬ দিনের ক্যাম্পেইনে তিনি পরবর্তীতে ব্রিটেন জয় করার ভিত্তি স্থাপন করে যান।এছাড়াও টিবেরের মুখে নতুন বন্দর নির্মাণ, পানি নিষ্কাশনের নালা (AQUA CLAUDIA) স্থাপন এবং ফসিন লেক শুকিয়ে চাষাবাদের জন্য বিশাল এলাকা উদ্ধার তার সময়ের কাজ।
ক্লডিয়ান রাজবংশ
অগাস্টাস সীজার কোনো উত্তরাধিকারী মনোনীত করতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সৎ ছেলে টাইবেরিয়াস ক্লডিয়াস রোমের পরবর্তী শাসক নিযুক্ত হন। টাইবেরিয়াসের পর আরও তিনজন শাসক এই ক্লডিয়ান বংশ থেকে নিযুক্ত হন। ক্লডিয়ান বংশের সর্বশেষ সম্রাট হলেন নীরো।
দুর্নীতি, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা ও চরম বিলাসিতার সাথে নীরোর নামটি ইতিহাসে যুক্ত রয়েছে। তিনি নিজ হাতে তাঁর মাতা, ভ্রাতা ও স্ত্রীকে হত্যা করেন। তাঁর সময়ে রোমে এক বিরাট অগ্নিকাণ্ড ঘটে। অনেকের মতে নীরো নিজেই এই অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী। সমগ্র রোম শহরের প্রায় অর্ধাংশ এই অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়। নীরো এই অগ্নিকাণ্ড নেভাবার কোনো চেষ্টা তো করেনইনি, উপরন্তু রোম শহর যখন পুড়ছিল, নীরো মনের সুখে তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।
এই অগ্নিসংযোগের জন্য তিনি খ্রিস্টানদের দায়ী করেন এবং বহু খ্রিস্টানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। চরম বিলাসিতা ও অমিতব্যয়িতার জন্য নীরো সব সময় অর্থের প্রয়োজন অনুভব করতেন। এজন্য তিনি অনেক ধনী ব্যক্তিকে হত্যা করে তাঁদের অর্থ আত্মসাৎ করেন।
তাঁর নিষ্ঠুরতার জন্য তিনি অল্পদিনের মধ্যে সকলের শত্রুরূপে চিহ্নিত হন এবং যখন তিনি গ্রীসে অবস্থান করছিলেন তখন গল ও স্পেনে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আরম্ভ হয়।
তিনি রোমে ফিরে এলেন কিন্তু সিনেট ইতিমধ্যেই তাকে গণশত্রুরূপে ঘোষণা করে এবং সমগ্র রোমেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু হয়। উপায়ান্তর না দেখে তিনি প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন।
আরও দেখুন :