Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

গ্রীসীয় শিক্ষা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীসীয় শিক্ষা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। হোমারীয় যুগের অবসানে নগররাষ্ট্রের বিকাশের সাথে সাথে গ্রীসে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানের ও অনুষ্ঠানের সৃষ্টি হয়, লোকের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন আসে, শিক্ষা সংস্কৃতিরও প্রসার ঘটে। গ্রীসের স্বাধীন মানুষদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষিত ছিল। অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলেরা ৭ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে লেখাপড়া শিখত। স্কুলে লিখতে॥ পড়তে এবং হিসাব করতে শেখান হত এবং মনের ভাব স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে প্রকাশের কৌশলও শেখান হত। গ্রীসে বাগ্মিতার কদর ছিল।

গ্রীসীয় শিক্ষা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান

 

 

গ্রীসীয় শিক্ষা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান

গ্রীকরা হোমার এবং অন্যান্য কবির কবিতা ভাল করে শিখত। গ্রীসের অনেক মানুষই হোমারের ইলিয়াড এবং ওডিসি মহাকাব্য থেকে হাজার হাজার লাইন মুখস্থ বলতে পারত। স্কুলে ছবি আঁকা, নাচ এবং সঙ্গীত বাধ্যতামূলকভাবে শেখান হত। ছেলেমেয়েরা বাঁশি এবং বীণা বাজাতে শিখত। গ্রীসের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়সমূহ ছিল এথেন্সে। গ্রীসে স্কুল-শিক্ষার লক্ষ্য ছিল ছেলেদের সক্রিয়, শক্তিশালী ও সাহসীরূপে গড়ে তোলা। ছাত্ররা দৌড়, ঝাঁপ, কুস্তি ইত্যাদি শিখত।

কারিগর ও কৃষকের ছেলেরা সচরাচর স্কুলের পুরো শিক্ষা পেত না, দরিদ্র পিতার কাজে সাহায্য করার জন্যে তারা আগেই স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হত। গ্রীসে মেয়েদের জন্যে কোন স্কুল ছিল না। মায়ের কাছে তারা গৃহকর্ম, সেলাই, সূচীকর্ম ইত্যাদি শিখত। প্রাচীন গ্রীসে মেয়েরা সংসারের কাজ করত, বাইরে বিশেষ বের হত না। আর পুরুষরা সারাদিনই প্রায় বাইরে কাটাত। সকালে উঠেই পুরুষেরা এ্যাগোরা বা সার্বজনীন চত্বরে জড়ো হত।

সকালে এখানে বাজার বসত, বিকেলে সকলে একসাথে বসে কথাবার্তা বলত, তর্ক করত, খবর আদান-প্রদান করত। এ্যাগোরার একপাশে পাথরের ফলকে নগরের আইনসমূহ লেখা থাকত। এ্যাগোরা ছাড়াও গ্রীসের নগরগুলোতে সর্বসাধারণের জন্যে থিয়েটার, স্টেডিয়াম প্রভৃতি ছিল। স্টেডিয়ামে ব্যায়াম, খেলাধুলার প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হত। কনসার্ট হলে বিখ্যাত বাদক ও গায়করা সঙ্গীত পরিবেশন করতেন ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অলিম্পিক ক্রীড়া ছিল প্রাচীর গ্রীসের একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। পেলোপনেসাস-এর অন্তর্গত অলিম্পিয়া নগরে প্রতি চার বছর অন্তর অলিম্পিক খেলা অনুষ্ঠিত হত। এখানে সারা গ্রীসের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদরা একত্রিত হয়ে দৌড়, ঝাঁপ, মল্লযুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ, রথচালনা প্রতিযোগিতা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করতেন। অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হত তা খুব ব্যয়সাপেক্ষ ছিল বলে কার্যত কেবল ধনী ব্যক্তিরাই এতে অংশ নিতে পারতেন।

অলিম্পিক ক্রীড়া দেখার জন্যে গ্রীক উপনিবেশ থেকে হাজার হাজার দর্শক অলিম্পিয়া নগরীতে এসে জড়ো হত। অলিম্পিক ক্রীড়ার জন্যে যুদ্ধ স্থগিত রাখার রেওয়াজ ছিল। অলিম্পিক খেলোয়াড়রা দেশে ফিরে গেলে স্বদেশের সব নাগরিকরা তাঁদের সংবর্ধনা জানাতেন। অলিম্পিক ক্রীড়া বিভিন্ন গ্রীক নগরসমূহের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি করেছিল।

খেলাধুলা ছাড়া থিয়েটারও গ্রীকদের খুব প্রিয় ছিল গ্রীক থিয়েটারের উদ্ভব হয়েছিল ডায়োনিসিয়াসের সম্মানে অনুষ্ঠিত বার্ষিক আনন্দ উৎসব থেকে। উৎসব-প্রাঙ্গণে স্যাটার বা ছাগ-মানুষের পোশাক পরা একদল গায়ক নেচে গেয়ে ডায়োনিসিয়াসের জীবনের নানা কাহিনীর রূপদান করত। দর্শকরা চারপাশে দাঁড়িয়ে দেখত আর শুনত। ক্রমশ স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ বা থিয়েটারের সৃষ্টি হয়। এ সকল থিয়েটার উন্মুক্ত স্থানে নির্মিত হত।

গায়ক-অভিনেতারা মাঝখানে অভিনয় করতেন, চারপাশে গ্যালারির মত ধাপে ধাপে দর্শকদের বসার আসন নির্মিত হত। যতদূর জানা যায়, এথেন্সের এক্রোপলিসে প্রথম থিয়েটার নির্মিত হয়েছিল। এতে ১৭ হাজার দর্শকের স্থান সংকুলান হত। অন্যান্য নগরে ৪০-৫০ হাজার আসনবিশিষ্ট থিয়েটারও ছিল।

 

 

ডায়োনিসিয়াসের মৃত্যুকাহিনীকে নিয়ে গ্রীক থিয়েটারে যেসব বিয়োগান্ত কাহিনীর অভিনয় হত তাকে বলা হত ট্র্যাজেডি। এ শব্দটার মূল অর্থ হচ্ছে ছাগসঙ্গীত অর্থাৎ ছাগ-মানুষদের গান। পরবর্তীকালে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এস্কাইলাস, সোফোক্লিস প্রমুখ নাট্যকার যেসব বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেন সেগুলোও ট্র্যাজেডি নামে পরিচিত হয়।

আরও দেখুন :

Exit mobile version