Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

গ্রীসীয় সাহিত্য ও শিল্পকলা

গ্রীসীয় সাহিত্য ও শিল্পকলা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রীসীয় সাহিত্য ও শিল্পকলা

গ্রীসীয় সাহিত্য ও শিল্পকলা

 

 

গ্রীসীয় সাহিত্য ও শিল্পকলা

গ্রীক সাহিত্যের আদিতম প্রকাশ ঘটেছে হোমারের মহাকাব্যে। এ যুগের মহাকাব্যে গ্রীকদের বীরত্বের কহিনী বর্ণিত হয়েছে। হোমারের সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’ এবং ‘ওডিসি’ সম্পর্কে আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। আমরা আগেই দেখেছি, হোমারীয় যুগের অবসানে কয়েক শতাব্দীব্যাপী ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা হয়। এ পরিবর্তনের ফলে গ্রীকসমাজে ব্যক্তিসত্তার উদয় ঘটে এবং সাহিত্যেও তার প্রতিফলন ঘটে। এ যুগে গাথা এবং শোকগাথার উদয় হয়।

এ সকল গাথায় ব্যক্তিগত প্ৰণয়কাহিনী বা কোনো করুণ অভিজ্ঞতার বর্ণনা থাকত । উল্লেখ্য যে, সোলোন একজন প্রতিভাবান গাথা রচয়িতা ছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতাব্দীতে গাথার স্থানে লিরিক বা গীতিকবিতার উদয় হয়। লায়ার বা বীণাসহযোগে এ সকল গীতিকবিতা গীত হত। আলসিউস, স্যাফো পিন্ডার প্রমুখ ছিলেন বিখ্যাত গীতিকবিতা রচয়িতা।

গ্রীকদের সাহিত্যরচনার সার্থক প্রকাশ ঘটেছিল বিয়োগান্ত নাটক রচনায় ডায়োনিসাস-এর উৎসবে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে, গ্রীক নাটকের জন্ম হয়েছিল : এ কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রীক বিয়োগান্ত নাটকের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা এস্কাইলাস (৫২৫-৪৫৬ খ্রিঃ পূঃ)। অপর একজন বিখ্যাত নাট্যকার হলেন সোফোক্লিস (৪৯৬-৪০৬ খ্রিঃ পূঃ)। গ্রীসের শেষ বিখ্যাত বিয়োগান্ত নাট্যকারের নাম ইউরিপাইডিস (৪৮০-৪৪৬ খ্রিঃ পূঃ)।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গ্রীক মিলনান্ত নাটক উৎকর্ষের বিচারে বিয়োগান্তক নাটকের চেয়ে নিকৃষ্ট ছিল। এ শ্রেণীর নাট্যকারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এরিস্টোফেনিস (আনুমানিক ৪৪৮-৩৮০ খ্রিঃ পূঃ)। তিনি ছিলেন একজন উগ্র অভিজাতপন্থী এবং তাঁর সমকালীন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আদর্শকে ব্যাঙ্গ করে তিনি নাটক রচনা করতেন। গ্রীসের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগের দুজন ঐতিহাসিকের উল্লেখ না করলে গ্রীক সাহিত্যের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

ইতিহাস শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘হিষ্ট্রি’ শব্দটি এসেছে গ্রীক ভাষা থেকে। এটা খুবই সঙ্গত, কারণ ইতিহাস বিদ্যার প্রকৃত উ ৎপত্তি ঘটেছিল গ্রীক দেশেই। এবং ইতিহাসের জনকরূপে গণ্য করা হয় আদি গ্রীস ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসকে। হেরোডোটাস (৪৮৪-৪২৫ খ্রিঃ পূঃ) ছিলেন এশিয়া-মাইনরের উপকূলের এক গ্রীক নগরীর অধিবাসী। তিনি পারস্য সাম্রাজ্য, গ্রীস ও ইটালিতে ব্যবস্থাপক ভাবে ভ্রমণ করেন এবং প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেন।

তাঁর রচিত নয় খণ্ডে সম্পূর্ণ ‘ইতিহাস’ নামক গ্রন্থখানি মূলত গ্রীসীয়-পারসিক যুদ্ধের ইতিহাস, কিন্তু এর পরিসর এত ব্যাপক এবং এত বিভিন্ন জাতির ইতিহাস এতে বর্ণিত হয়েছে যে, এটিকে প্রায় একটি বিশ্বইতিহাস রূপে গণ্য করা চলে। হেরোডোটাসকে যদি ইতিহাসের জনক বলা চলে, তবে তাঁর সমকালীন অপর গ্রীক ইতিহাসবিদ থকিডাইডিস-কে অবহিত করা চলে বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনকরূপে।

সফিস্টদের সংশয়বাদ ও বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে থকিডাইডিস (৪৬০-৩৯৫ খ্রিঃ পূঃ) সতর্কতার সাথে সাক্ষ্য প্রমাণাদি বাছাই করতেন এবং ব্যক্তিগত অভিমত, জনশ্রুতি, কল্পকাহিনী প্রভৃতিকে বর্জন করতেন। তাঁর রচিত ইতিহাসের বিষয়বস্তু ছিল স্পার্টা ও এথেন্সের যুদ্ধ— অর্থাৎ পেলোপনেসীয় যুদ্ধ। তিনি বিজ্ঞান সম্মতভাবে ও নিরপেক্ষভাবে এ যুদ্ধের বিবরণ দিয়েছেন ও তাঁর জটিল কারণ সমূহ ও যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা করেছেন।

থুকিডাইডিস তাঁর রচনায় একস্থানে বলেছেন, ‘আদিমকালের গ্রীকদের জীবনযাত্রা যে এখনকার বর্বরদের মতো ছিল এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ দেয়া যেতে পারে।’ এ উক্তির মধ্যে যে গভীর ইতিহাস-বোধের পরিচয় আছে, সে যুগের কোনো প্রাচ্য দেশে তার তুলনা পাওয়া যায় না। বর্বর দশা থেকে ঐতিহাসিক বিবর্তনের মাধ্যমেই যে সভ্য জাতির উদয় ঘটে, এ রকম উক্তি বা উপলব্ধি সে যুগের যে-কোনো প্রাচ্য সাম্রাজ্যে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল।

এ থেকেই থুকিডাইডিসের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির মাহাত্ম্য বোঝা সম্ভব হবে। অপর একজন সুবিখ্যাত এথেনীয় ঐতিহাসিক হলেন জেনোফোন (৪৩০-৩৫৫ খ্রিঃ পূঃ)। এ্যারিস্টটলও ইতিহাস বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

 

প্রাচীন গ্রীসের কয়েকটি মাটির পাত্র। পাত্রের গায়ে নানা ধরনের সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকা আছে।

গ্রীক-চরিত্রের প্রকৃত প্রকাশ সাহিত্যের চেয়েও বেশি করে ঘটেছে শিল্পকর্মে। গ্রীকরা ছিল মূলত বস্তুবাদী, যারা জগৎকে প্রাকৃতিক ও বাস্তব হিসেবেই গণ্য করত। প্লেটো ও অধ্যাত্মবাদী ধর্মের অনুসারীরা অবশ্য ব্যতিক্রম ছিল। কিন্তু গ্রীকরা সচরাচর আধ্যাত্মিক জগৎ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী ছিল না। প্রাচীন গ্রীসের স্থাপত্যশিল্প ও ভাস্কর্যে তাই গ্রীকদের জাগতিক আদর্শেরই প্রতিফলন ঘটেছিল।

গ্রীসের শিল্পকর্মে গ্রীকদের মানবতাবাদের প্রতিফলন ঘটেছিল। গ্রীকদের দৃষ্টিতে জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি ছিল মানুষ, এ মানুষের মহত্তব ও জয়গানের প্রতিফলন ঘটেছিল গ্রীক শিল্পকর্মে। গ্রীক শিল্পকর্মে জাতীয় জীবনের এবং গ্রীক নাগরিকদের ঐক্যবোধেরও প্রতিফলন ঘটেছিল। গ্রীক স্থাপত্য শিল্পের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন হচ্ছে এথেন্সের পার্থেনন বা দেবী এথেনার মন্দির।

শ্বেত মার্বেলপাথরে তৈরি এ মন্দিরটির ভেতরে ও বাইরে অপূর্ব সুন্দর দেবদেবীর মূর্তি স্থান পেয়েছিল। মন্দিরের ভিতরে ছিল গজদন্ত ও সোনা দিয়ে তৈরি দেবী এথেনার এক সুবিশাল ও অপরূপ মূর্তি। এ মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত ডাস্কর ফিডিয়াস। ভাস্কর্যে গ্রীকরা অভূতপূর্ব কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ভাস্কররা তাদের নির্মিত মূর্তিতে গ্রীক নাগরিকদের শ্রেষ্ঠ গুণাবলী, যথা— সাহস, বিক্রম, দেশপ্রেম ইত্যাদির প্রকাশ ঘটাতেন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

গ্রীক ভাস্কররা গতিশীল ও ক্রীড়ারত মানুষের প্রতিমূর্তি নির্মাণে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। গ্রীক নগরগুলোতে সুন্দর সুন্দর মন্দির ও অট্টালিকা নগরীর শোভাবর্ধন করত। আর দেবদেবী, খ্যাতনামা ব্যক্তি ও বিভিন্ন কাজে রত মানুষের সুন্দর সুন্দর মূর্তি এ সকল মন্দির, অট্টালিকা,নগর চত্বর ও রাস্তাঘাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করত।

আরও দেখুন :

Exit mobile version