Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

মৌর্যযুগের ভারতবর্ষের অবস্থা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মৌর্যযুগের ভারতবর্ষের অবস্থা। মৌর্য সাম্রাজ্য প্রাচীন ভারতে লৌহ যুগের একটি বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীতে মৌর্য রাজবংশ দ্বারা শাসিত এই সাম্রাজ্য ৩২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বদিকে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত মগধকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র।[১৫][১৬] এটি ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সাম্রাজ্য।

মৌর্যযুগের ভারতবর্ষের অবস্থা

 

 

মৌর্য সাম্রাজ্য তৎকালীন যুগের অন্ততম বৃহত্তম সাম্রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হত, শুধু তাই নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এর চেয়ে বড় সাম্রাজ্য কখনো তৈরী হয়নি। ৩২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নন্দ রাজবংশ উচ্ছেদ করে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তারপর মহান আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর পশ্চাৎ অপসারণের সুযোগে নিজ সামরিক শক্তিবলে মধ্য ও পশ্চিম ভারতের আঞ্চলিক রাজ্যগুলিকে জয় করে বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

৩১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যেই গ্রীক সত্রপগুলিকে পরাজিত করে মৌর্য সাম্রাজ্য সম্পূর্ণ উত্তর-পশ্চিম ভারত জুড়ে বিস্তৃত হয়। বর্তমান যুগের মানচিত্রের নিরিখে এই সাম্রাজ্য উত্তরে হিমালয়, পূর্বে আসাম, পশ্চিমে বালুচিস্তান ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও বিন্দুসার এই সাম্রাজ্যকে দক্ষিণ ভারতে বিস্তৃত করেন এবং অশোক কলিঙ্গ রাজ্য জয় করে সমগ্র দক্ষিণ ভারতে মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসন প্রতিষ্ঠিত করেন। অশোকের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই ১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে মগধে শুঙ্গ রাজবংশের উত্থান ঘটে। এটি ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সাম্রাজ্য।

 

মৌর্যযুগের ভারতবর্ষের অবস্থা:

মৌর্যযুগের ভারতবর্ষের সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিবরণ পাওয়া যায় মূলত গ্রীকদূত মেগাস্থিনিসের বিবরণ ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থ হতে। ছোটবড় ১১৮টি রাজ্যের মধ্যে মগধই ছিল সর্ববৃহৎ। বিশাল সেনাবাহিনী রাজ্যপ্রহরায় নিয়োজিত। শোন ও গঙ্গা নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত পাটলীপুত্র ছিল রাজধানী–বিশাল ও সুন্দর কারুকার্য দ্বারা শোভিত। কঠোর দণ্ডাদেশ বিদ্যমান থাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নত ছিল।

সাধারণ নাগরিকবৃন্দ ছিল ভদ্র, শান্তিপ্রিয় ও সত্যবাদী। সমগ্র রাজ্যটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল; রাজপ্রতিনিধিগণ মন্ত্রীদের সাহায্যে দেশ শাসন করতেন। সমাজে সাতটি জাতির পরিচয় পাওয়া যায়-দার্শনিক, কৃষক, শিকারি, পশুপালক, কারিগর ও ব্যবসায়ী যোদ্ধা, পরিদর্শক এবং অমাত্য ৷ পাটলীপুত্রের শাসনভার ছিল পৌরসভার হাতে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এটা ছয়টি বোর্ড বা সমিতিতে বিভক্ত ছিল। শ্রমশিল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদেশিদের তত্ত্বাবধান; জন্মমৃত্যুর হিসাব গণনা, কারুশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, শুল্ক আদায় প্রভৃতি কাজ ছিল এদের হাতে ন্যস্ত। মৌর্যযুগের জলসেচের যথেষ্ট উন্নতির পরিচয় পাওয়া যায়। বছরে দু’বার ফসল জন্মাত; কাজেই দুর্ভিক্ষের অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। রাজ্য শাসনে প্রকৃত কর্তা ছিলেন রাজা; তবে তিনি স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না।

অমাত্য ও অন্যান্য রাজপুরুষদের সাহায্য নিয়েই তিনি রাজ্য পরিচালনা করতেন। রাজা প্রজা সম্পর্ক ছিল পিতার সাথে সন্তানের সম্পর্কের তুল্য। সাম্রাজ্য তখন চারটি প্রদেশে বিভক্ত ছিলঃ তক্ষশীলা, উজ্জয়িনী, তোসালি ও সুবর্ণগিরি। গ্রামগুলি ছিল ক্ষুদ্রতম বিভাগ, এগুলি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থাৎ যা কিছু প্রয়োজন গ্রামের মধ্যেই উৎপন্ন হত।

 

 

মৌর্যযুগের শিল্পকলায় পারসিকদের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চন্দ্রগুপ্তের রাজপ্রাসাদ, অশোকের স্তম্ভগুলি, স্তূপ ও বাসগুহাগুলি উৎকৃষ্ট শিল্পকলার পরিচয় বহন করে।

 

আরও দেখুন :

Exit mobile version