Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

মিশরের সামাজিক জীবনধারা

মিশরের সামাজিক জীবনধারা

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মিশরের সামাজিক জীবনধারা

মিশরের সামাজিক জীবনধারা

 

 

মিশরের সামাজিক জীবনধারা

নগর সভ্যতার উদয়ের পর পৃথিবীতে শ্রেণীবিভাগ দেখা দেয়, এ কথা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। সমগ্র মিশর সাম্রাজ্যের অধীনস্থ অঞ্চলের (সিরিয়াকে বাদ দিয়ে) জনসংখ্যা ছিল সত্তর লক্ষ। মিশরীয় সমাজের মানুষ ছিল দুই শ্রেণীতে বিভক্ত৷ দাস এবং স্বাধীন মানুষ। স্বাধীন মানুষদের মধ্যেও আবার শ্রেণীভেদ ছিল।

সবচেয়ে ওপরে ছিল রাজকীয় পরিবারের স্থান, তার নিচে ছিল পুরোহিত এবং অভিজাত শ্রেণী, তাদের নিচে স্থান ছিল লিপিকার, বণিক, কারিগর এবং অবস্থাপন্ন কৃষকদের। তারও নিচে ছিল ভুমিদাস এবং দরিদ্র কৃষকদের অবস্থান। এই বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের মধ্যে ধনের বৈষম্য ছিল পর্বতপ্রমাণ । রাজকীয় পরিবার, সভাসদ, ধর্মমন্দিরের পুরোহিত এবং ধনী ভূস্বামীরা বাস করতেন দামী আসবাবপত্র ও অন্যান্য মহার্ঘ সামগ্রী দ্বারা সুসজ্জিত প্রাসাদোপম অট্টালিকায়।

বিলাসিতার সকল উপকরণ সেখানে তাঁদের জন্য জমা থাকত। প্রাসাদগুলোর সংলগ্ন ছিল ফুল ও ফলের বৃক্ষশোভিত সুন্দর উদ্যান, ঝর্নার পানি বয়ে যেত তার মধ্য দিয়ে, পাখির সুকণ্ঠি গীত শোনা যেত। প্রাসাদের অধিবাসীগণ তাঁদের প্রিয়জনদের সাথে হর্ষচিত্তে উপভোগ করতেন বীণার মধুর সঙ্গীত ও লাস্যময়ী, রূপসী তরুণীদের অনুপম নৃত্যভঙ্গিমা। কখনও তাদের দেখা যেত পাশা খেলায় মগ্ন হতে।

ইতস্তত ক্রীড়ারত তাদের শিশুদের কলহাস্যের সাথে মিলিত তাদের হাসি, গান ও আনন্দের ধ্বনিতে যেন সেখানে স্বর্গের পরিবেশ সৃষ্টি হত। এদের নিচুতে অবস্থানরত ব্যবসায়ী, কারিগর, লিপিকার এবং অবস্থাসম্পন্ন কৃষকদের জীবনে বিলাসিতার তেমন সমাবেশ না ঘটলেও তাদের জীবন ছিল মোটামুটি স্বচ্ছল। সর্বনিম্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত দরিদ্র কৃষক ও মজুরশ্রেণীর অবস্থা ছিল অত্যন্ত দুঃসহ। তাদের বাড়িঘর ছিল খড় ও মাটির তৈরি। আসবাব বলতে ছিল কয়েকটি কাঠের বাক্স ও টুল।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আর ছিল কিছু মাটির তৈরি হাঁড়ি বাসন ইত্যাদি। গ্রামে কৃষকদের সর্বদা কর আদায়কারী রাজকর্মচারীর ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকতে হত। শহরে শ্রমিকদের জোর করে ধরে নিয়ে সরকারি রাস্তা তৈরির কাজে বা রাজকীয় শস্যক্ষেত্রে অথবা পিরামিড তৈরির জন্যে বিরাট বিরাট পাথর বহনের কাজে লাগান হত। মিশরীয়দের জীবনযাত্রা প্রণালী সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানা যায়।

ধনীরা দামী পোশাক পরিধান করতেন, দরিদ্রদের মধ্যে অনেককে আবার অর্ধ-উলঙ্গ থাকতেও দেখা যেত। ধনীদের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ কানে, গলায় ও হাতে অলঙ্কার পরিধান করতেন। মহিলাগণ প্রসাধনীও ব্যবহার করতেন। বিবাহিত জীবনে অধিকাংশ পুরুষ একটি স্ত্রীতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। অনেক ধনীর গৃহে আবার হারেম রক্ষিত হত। তবুও, মোটামুটিভাবে বিবাহিত জীবন পরিচ্ছন্ন ছিল। শিশুহত্যা, অবাঞ্ছিত সন্তান হত্যা ইত্যাদি সাধারণত ঘটত না।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ খুব কমই হত এবং স্ত্রীকে ব্যাভিচারিণী প্রমাণ করতে পারলেই কেবলমাত্র স্বামী তাকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারতেন। সমাজে নারীর স্থান ছিল অতি উচ্চে। পুরুষের সমান মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন নারী। সমাজের কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রবল প্রতাপ দেখা যেত। অনেক ক্ষেত্রে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রভাবও ছিল।

 

 

সন্তানেরা মায়ের সূত্রে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হত। মিশরের ইতিহাসে কয়েকজন নারী রাজ-সিংহাসনেও উপবেশন করেছিলেন। সমাজে দাসদের অবস্থান ছিল সবার নিচে। সব স্বাধীন মানুষরা, এমন কি দরিদ্র ভূমিদাসরাও তাদের ঘৃণা করত।

আরও দেখুন :

Exit mobile version