Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

রোমান সভ্যতার সাহিত্য

রোমান সভ্যতার সাহিত্য

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় রোমান সভ্যতার সাহিত্য

রোমান সভ্যতার সাহিত্য

 

 

রোমান সভ্যতার সাহিত্য

সাহিত্যের ক্ষেত্রেও রোম গ্রীকদের নিকট ঋণী। প্রজাতান্ত্রিক রোমের শেষ দুই শতাব্দীতে রোমের উচ্চশ্রেণীর জনগণের নিকট গ্রীক ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়ন একটি ফ্যাশানে পরিণত হয়। এই ভাষা ও সাহিত্যের বিপুল প্রভাব পড়েছিল রোমান সাহিত্যের উপর।

সে যুগের বিখ্যাত সাহিত্য-কর্মের মধ্যে প্লটাস ও টেরেন্স কর্তৃক রচিত মিলনান্তক রচনাবলী (মিনাণ্ডার-এর ‘New Comedy’-র অনুকরণে রচিত) ও ক্যাটুলাস-এর গীতিকাব্যগুলি উল্লেখযোগ্য। এ যুগের মহাকাব্য, নাটক, গীতিকবিতা সবকিছুতেই অত্যন্ত সচেতনভাবে গ্রীকদের অনুকরণ করা হয়েছে। রোমান যুগের সাহিত্যের অন্যতম অঙ্গ এর নাটক। এ যুগের প্রখ্যাত নাট্যকার প্লটাস-এর (২২৪-১৮৪ খ্রিঃ পূঃ) অধিকাংশ রচনাই ব্যঙ্গাত্মক ও বিদ্রুপাত্মক।

উচ্চশ্রেণীর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান বলে বিবেচিত মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে তিনি তীব্র ভাষায় কষাঘাত করেছেন। তাঁর অঙ্কিত কয়েকটি নষ্ট চরিত্র থেকে পরবর্তীকালে শেক্সপীয়র তাঁর Comedy of Errors ও The Merry Wives of Windsor-এর চরিত্রগুলি সৃষ্টি করেছেন। সপ্তদশ শতাব্দীর ফরাসী নাট্যকার মলিয়েরও তাঁর রচনার জন্যে অনেকাংশে প্লটাস-এর কাছে ঋণী। পরবর্তী নাট্যকার টেরেন্স (১৯০-১৫৯ খ্রিঃ পূঃ)-এর রচনা অনেকখানি শালীন ও মার্জিত।

যদিও তাঁর নাটক প্লটাস-এর মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি, তথাপি ল্যাটিন ভাষাকে সাহিত্যের ভাষায় রূপান্তরিত করার অনেকখানি কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। সিসেরো ও ভার্জিলের রচনার পটভূমি তিনিই তৈরি করে গিয়েছিলেন। প্রজাতান্ত্রিক রোমের অন্যতম গীতিকাব্য রচয়িতা ক্যাটুলাস-এর কাব্যের মূল বিষয়বস্তু হল মানব মানবীর প্রেম। নিজ জীবনকাহিনী অবলম্বনে রচিত এ প্রেমকাহিনী পৃথিবীর সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ। পরবর্তী যুগে তাঁর রচনার বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পম্পি ও সীজারের আকাশচুম্বী আকাঙক্ষাকে বিদ্রুপ করে তিনি তাঁর শেষ বয়সের কবিতাগুলি রচনা করেন। এ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক সিসেরো ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, বক্তা, প্রবন্ধকার ও সাহিত্য সমালোচক। তাঁর বিশাল রচনা সংকলনে প্রজাতান্ত্রিক রোমের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি বিস্তৃত আলোকপাত করা হয়েছে। ল্যাটিন ভাষার সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং তাকে সাহিত্যের ভাষায় পরিণত করার গৌরবময় কৃতিত্বের তিনি অধিকারী।

অগাস্টাস-এর যুগ রোমান সাহিত্যের স্বর্ণযুগ। এ স্বর্ণযুগের অন্যতম কবি ভার্জিল (৭০-১৯ খ্রিঃ পূঃ) শুধু রোমান কাব্যসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে ‘পরিচিতি নন, পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ট কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ঈনিড (Aeneid) অগাস্টাস-এর পরিবারিক ইতিহাস ও তাঁর বিশ্বজয়ের আকাঙক্ষার কাহিনীর ভিত্তিতে রচিত। এ গ্রন্থে ল্যাটিন জনগণের পৌরাণিক নায়ক ইনিস ট্রয় থেকে ইতালিতে আবির্ভূত হয়েছেন।

ঈনিড ভার্জিলের প্রগাঢ় দেশপ্রেমের স্বাক্ষর ও রোমের সাম্রাজ্যবাদী নীতির অন্যতম ধারক। হোরেস (৬৫-৮ খ্রিঃ পূঃ)-এর খ্যাতি রয়েছে গীতিকবিতা ও ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা রচনার জন্য। হোরেসের কবিতায় সুখের এপিকিউরীয় ব্যাখ্যা ও দুঃখের দিনে সাহসী হওয়ার স্টয়িক উপদেশ উভয়ই বর্তমান। তাঁর মতে, যুক্তিবান বিবেকের দ্বারাই সর্বোচ্চ সুখ অনুভব করা সম্ভব। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ওভিড (খ্রিঃ পূঃ ৪৩-১৭ খ্রিঃ) কবি হিসেবে অনেকখানি ক্যাটুলাস-এর নিকটবর্তী।

কবিতার মধ্য দিয়ে প্রেমের কাহিনী বর্ণনার নিপুণতায় তিনি অনন্য। প্রধানত তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘রূপান্তর’ বা ‘মেটামোরফোসিজ’ Metamorphoses-এর মাধ্যমে প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনীগুলি বর্তমান যুগে প্রচলিত হয়েছে। অগাস্টাস-এর মৃত্যুর পরেও রোমের সাহিত্যচর্চা সমান গতিতে অব্যাহত থাকে এবং বহুসংখ্যক কবি ও সাহিত্যিক তাঁদের গ্রন্থগুলি রচনা করেন। পরবর্তী যুগের অন্যতম কবি জুভেনাল (৫৮-১৩০ খ্রিঃ)-এর কবিতা মূলত ব্যঙ্গধর্মী।

 

 

তাঁর রচনা বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক ড্রাইডেন, পোপ ও সুইট্-এর রচনাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। জুভেনাল-এর বন্ধু মার্শাল (৪০-১০২ খ্রিঃ) একই ধরনের কবিতা রচনা করেন; সম-কালীন সমাজের প্রখর সমালোচক মার্শালের প্রতিটি লেখা ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপে পরিপূর্ণ।

আরও দেখুন :

Exit mobile version