Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

শিল্প এবং কৃষি : কাঁচামালের সম্পর্ক 

শিল্প এবং কৃষি : কাঁচামালের সম্পর্ক 

শিল্প এবং কৃষি : কাঁচামালের সম্পর্ক 

আজকের আলোচনার বিষয় শিল্প এবং কৃষি : কাঁচামালের সম্পর্ক  – যা  কৃষক আর্থব্যবস্থা এর অর্ন্তভুক্ত, আগেই বলেছি বাজার একটা জায়গায় সীমিত নয়। বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিকাজের ভিন্নতা বুঝতে গেলে সারা পৃথিবীর বাজার ব্যবস্থাকে চিন্তা করতে হবে। কিছু নৃবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীর মতে শিল্প বিপ্লবের পর শিল্পের বৈশিষ্ট্য না আলোচনা করে কৃষক বা কৃষি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আপনারা জানেন যে শিল্প বিপ্লব হয়েছে ইউরোপে। আপনারা এও জানেন যে, পৃথিবীর অধিকাংশ শিল্প- কল-কারখানা স্থাপিত হয়েছে ইউরোপে এবং আমেরিকা মহাদেশে।

কিন্তু শিল্পের জন্য কাঁচামাল প্রয়োজন পড়ে। সাধারণভাবে শিল্প-কল-কারখানাতে খনিজ সম্পদ এবং কৃষিজ উৎপাদন কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে খনিজ দ্রব্যের আলোচনা প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে, খনিজ দ্রব্য বা কৃষিজ কাঁচামাল উভয়ই সরবরাহ হয়েছে গরিব দেশগুলো থেকে যেখানে শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল না।

শিল্প এবং কৃষি : কাঁচামালের সম্পর্ক

 

 

আজ আমরা নিউজিল্যান্ড কিংবা ডেনমার্কে গরুর খামারের কথা শুনে, অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমের বিপুল উৎপাদনের কথা জেনে মনে করতে পারি সেইসব দেশ বোধহয় কাঁচামালের জন্য কারো উপর নির্ভর করে না। কিন্তু আসলে একেবারেই উল্টো। শিল্পের শুরুর সময়ে আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সমাজগুলো থেই কাঁচামাল গেছে শিল্পভিত্তিক দেশে।

ইউরোপের দেশগুলো বিভিন্ন প্রান্তের সমাজ দখল করে নিয়েছিল বলে কাঁচামাল সংগ্রহ করা সহজ হয়েছে তাদের পক্ষে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: ইউরোপে যখন বস্ত্র শিল্পের প্রসার ঘটায় তখন তার জন্য প্রয়োজনীয় তুলা সরবরাহ হ’ত ইউরোপের বাইরে থেকে। একই কথা তামাক কিংবা চিনি এবং আরও শিল্প নিয়ে বলা চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন করানো হাঁত জোর-জবরদস্তি করে। আবার জোর-জবরদস্তি করেই কোন একটা কিছুর চাষ বা উৎপাদন বন্ধ করেও দেয়া হ’ত। বাংলা অঞ্চলে নীল চাষের কথা আপনারা জানেন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নীল চাষ করবার জন্য এখানকার চাষীদের উপর বল প্রয়োগ করা হ’ত। চাষীরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন – সে কথাও আপনাদের জানা। তেমনি এখানকার বস্ত্র শিল্পকে ধ্বংস করবার জন্য মসলিন কারিগরদের উপর নির্যাতনের কথাও জানা যায়। এই সকল ইতিহাস লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, কৃষকরা নিজের ইচ্ছেতে নগদ বিক্রির ফসল (cash crop) উৎপাদন করেন – এই ধারণাটি সঠিক নয়। চাপের মধ্য দিয়ে কৃষকরা এই ধরনের ফসল উৎপাদন করেছেন।

তাছাড়া পুঁজিবাদী সমাজে নানা কারণে নগদ মুদ্রার প্রয়োজন দেখা দেয়। সেক্ষেত্রেও কৃষক নগদ বিক্রির ফসল উৎপাদন করতে পারেন। এর মানে এই নয় যে, কৃষক-কিষাণীরা তাঁদের গেরস্তালির জন্য প্রয়োজনীয় খোরাকী উৎপাদন করবার পর এই ধরনের ফসল উৎপাদন করেন। বরং, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেদের জমি থেকে সংসারের খোরাকী যোগাড় করতে পারেন না। অর্থাৎ, কৃষিক্ষেত্রে একটা সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কৃষকদের উৎপাদনে বদল এসেছে। এখনও ইউরোপ- আমেরিকার বিশাল সব শিল্প দাঁড়িয়ে আছে গরিব বিশ্ব থেকে সরবরাহ করা কৃষিজ কাঁচামালের উপর।

 

 

এই সব শিল্পের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, চা, কফি, কোকো, তামাক, বস্ত্র, রাবার, কাগজ, চামড়া, সামুদ্রিক খাবার ইত্যাদি। কাঁচামালের জন্য ঐ সকল দেশ খুব সামান্য আয় করে। পক্ষান্তরে, শিল্পজাত দ্রব্যের দাম চড়া হওয়ায় শিল্পভিত্তিক দেশগুলো দুইবার লাভ করে। অনেক গবেষকের মতে, এটা দরিদ্র দেশগুলো দরিদ্র থেকে যাবার একটা কারণ। উপনিবেশের সময়কাল থেকেই এই বৈষম্য চলে আসছে। কৃষক আর্থব্যবস্থা বুঝবার জন্য এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকার। শিল্পের জন্য কাঁচামাল ছাড়াও স্বচ্ছল শ্রেণীর ভোগের প্রয়োজনে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করে থাকেন। যেমন, বর্তমান বাংলাদেশে শীতকালীন সব্জী, গ্রীষ্মকালের আম ইত্যাদি মূলত শহুরে স্বচ্ছল মানুষের জন্য উৎপাদিত হয়ে থাকে ।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version