Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

হিব্রু ধর্ম

আজকের আলোচনার বিষয় হিব্রু ধর্ম। হিব্রু সভ্যতা মূলত জেরুজালেম নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। “হিব্রু” মূলত একটি ভাষার নাম; অনেক পণ্ডিতের মতে শব্দটির অর্থ যাযাবর বা নিম্ন সামাজিক স্তরের মানুষ—অর্থাৎ নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ নয় এমন গোষ্ঠী। হিব্রুরা ভাষাগত দিক থেকে সেমিটিক পরিবারভুক্ত, এবং হিব্রু ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম লিখিত ভাষাগুলোর একটি। আজ তারা ইসরায়েলে বসবাসের পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে।

হিব্রুদের প্রধান ধর্মীয় নেতা হিসেবে হযরত মুসা (আ.)-কে মানা হয়। হিব্রু বাইবেল (তানাখ) হিব্রু ভাষায় রচিত; তারা পুরাতন বিধান (Old Testament)-এ বিশ্বাসী—ধর্মীয় অনুশাসন, আইন ও নবীদের বাণী এই গ্রন্থ-ঐতিহ্যের কেন্দ্রে।

হিব্রু ধর্ম

 

 

ধর্মীয় অবদান ও বিবর্তনের ধারণা

মানবসভ্যতার বিস্তৃত ইতিহাসে প্রাচীন হিব্রুদের উল্লেখযোগ্য অবদান সবচেয়ে বেশি সংরক্ষিত হয়েছে ধর্মীয় ক্ষেত্রে। নানা সময়, ভূগোল ও সামাজিক বাস্তবতার প্রভাব নিয়ে হিব্রু ধর্ম ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়েছে। এই বিবর্তনকে মোটামুটি পাঁচটি স্তরে ভাগ করে দেখা যায়। নিচে আপনার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দুটি স্তর তুলে ধরা হলো—পরবর্তী অংশে বাকিগুলো যোগ করব।

স্তর–১ (মানবজাতির অভ্যুদয়কাল থেকে আনু. ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)

এই প্রাথমিক যুগে বিশ্বাসের চরিত্র ছিল প্রকৃতি-নির্ভর ও আচারপ্রধান।

 

 

স্তর–২ (আনু. ১২০০–৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)

এই পর্যায়ে হিব্রু ধর্ম একেশ্বরচিন্তার দিকে অগ্রসর হলেও বাস্তবে চর্চা ছিল অনেকাংশে এক-দেবতা-নিষ্ঠ (monolatry/henotheism)—অর্থাৎ অন্য দেবতাদের অস্তিত্ব একেবারে অস্বীকার না করেও প্রধানত এক ঈশ্বর-এর উপাসনা।

 

 

 

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

স্তর (আনু. খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টমসপ্তম শতাব্দী: ধর্মসংস্কারের যুগ)

এই পর্যায়কে হিব্রু ধর্মের ধর্মসংস্কারের যুগ বলা হয়। প্রধান সংস্কারক ছিলেন আমোস, হোসিয়া, ইসাইয়ামিকাহ। তাঁদের নেতৃত্বে ধর্মের মধ্যে নতুন দার্শনিক ব্যাখ্যা ও নৈতিক আদর্শের প্রচলন ঘটে।

সংস্কারকদের মূল বক্তব্য ছিল—

১. একেশ্বরবাদ: পৃথিবীর একমাত্র প্রভু হলেন যেহোভা; অন্য জাতির দেবতাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।
২. ন্যায়নিষ্ঠ ঈশ্বর: যেহোভা কেবল ন্যায় মঙ্গলসাধনের দেবতা—সর্বময় শাসক নন। পাপ ও অন্যায় মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়, ঈশ্বরের দ্বারা নয়।
৩. নৈতিক ধর্ম: ধর্মের উদ্দেশ্য কেবল নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা—যেহোভা কোনো আনুষ্ঠানিকতা, বলিদান বা অর্ঘ্যের প্রত্যাশী নন। বরং মানুষের কর্তব্য হলো ন্যায়বিচার করা, নির্যাতিতকে রক্ষা করা এবং এতিম–বিধবার আশ্রয়দাতা হওয়া।

এই নতুন দর্শন মূলত হিব্রুদের প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছিল। এর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী—

এই পরিস্থিতিতে সংস্কারকরা সামাজিক দুর্নীতি দূরীকরণ, কুসংস্কারের অবসান ও একটি সুসংবদ্ধ ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতিকে একত্রিত করার প্রয়াস চালান।

এই ধর্মীয় বিপ্লবের ফলে—

এই পর্যায়ে স্বর্গ, নরক, শয়তান বা পরলোকে আত্মার মুক্তি—এসব ধারণা অনুপস্থিত ছিল। সংস্কারের প্রভাব স্থায়ী হয়নি; কিছু সময় পর আবারও হিব্রু ধর্মে বহিরাগত প্রভাব ফিরে আসে।

 

স্তর (৫৮৬৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ: ব্যাবিলনীয় বন্দীদশা)

৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ক্যালডীয় সম্রাট নেবুচাদনেজার জেরুজালেম দখল করে ইহুদিদের বন্দী করে ব্যাবিলনে নিয়ে যান। এই বন্দীদশা চলতে থাকে ৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত, যখন পারস্য সম্রাট কাইরাস ব্যাবিলন জয় করে ইহুদিদের মুক্তি দেন।

এই সময়কালকে ইহুদি ইতিহাসে ব্যাবিলনীয় বন্দীদশা বলা হয়, এবং এটিই হিব্রু ধর্মের চতুর্থ স্তর

 

স্তর–৫ (৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ–পরবর্তী: পারস্য যুগ ও পরবর্তী প্রভাব)

হিব্রু ধর্মের পঞ্চম সর্বশেষ স্তর শুরু হয় ৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, যখন পারস্য সম্রাট কাইরাস ইহুদিদের ব্যাবিলনীয় বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেন। এই সময়ে হিব্রু ধর্ম গভীরভাবে পারস্যের জরথুস্ত্রী ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়।

এ সময়ে ইহুদি ধর্মগ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ঘটে—

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রাচীন একেশ্বরবাদী হিব্রু ধর্ম রূপান্তরিত হয়ে বর্তমান প্রচলিত ইহুদি ধর্মে পরিণত হয়। এতে শুধু বিশ্বাস ও আচারই নয়, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক কাঠামোতেও আমূল পরিবর্তন আসে।

 

আরও দেখুন :

Exit mobile version