আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আসিরীয়দের সাফল্যের কারণ
আসিরীয়দের সাফল্যের কারণ
আসিরীয়দের সাফল্যের কারণ
আসিরীয় সম্রাটদের বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের সাফল্যের পশ্চাতে তিনটি কারণ বিদ্যমান ছিল।
প্রথমত আসিরীয়দের ছিল পরাক্রমশালী সেনাবাহিনী।
দ্বিতীয়ত আসিরীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতিকে বাধাদানকারীদের নিষ্ঠুর ভাবে দমন করা হত।
তৃতীয়ত আসিরীয়দের দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল তৎকালীন সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা। আসিরীয়দের বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেনাবাহিনীর দ্বারা এবং সেনাবাহিনীর স্বার্থে। এ বাহিনী ছিল তৎকালীন বিশ্বে সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে সুশিক্ষিত।
এ সেনাবাহিনী ছিল সম্পূর্ণভাবে লৌহনির্মিত সমরাস্ত্র দ্বারা সুসজ্জিত। এদের প্রধান অস্ত্র ছিল লৌহফলকবিশিষ্ট তীর ও ধনুক। আসিরীয়দের আক্রমণ কৌশল ছিল নিম্নরূপ। প্রথমে শত্রুর দিকে সুনির্দিষ্ট ভাবে নিক্ষিপ্ত শত সহস্র তীরের আঘাতে তারা
শত্রুকে দুর্বল করে দিত। তারপর তাদের ভারি রথসমূহ ও অশ্বারোহী বাহিনী শত্রুর ব্যূহভেদ করে মুহূর্তে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধুলিসাৎ করে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করত।
সে যুগের সকল জাতি এই দুর্ধর্ষ সামরিক বাহিনীকে ভয় পেত। বিজয়ী সৈন্যরা এরপরে তাদের বিজয় উৎসব পালন করত। সৈন্যরা তাদের লুণ্ঠিত মালামাল প্রদর্শন করত প্রদর্শনীর মাধ্যমে। সাথে সাথে তারা এনে হাজির করত সেই সমস্ত ধৃত যুদ্ধবন্দীদের যাদেরকে অচিরেই নিষ্ঠুরতম অত্যাচার দ্বারা মৃত্যুর পরপারে পাঠিয়ে দিত। সমষ্টিগত বাহিনীর আনন্দ, পান ও ভোজনের মাধ্যমে এই বিজয়োৎসবের সমাপ্তি ঘটত।
আসিরীয়ার রণসাফল্যের আরেকটি বিশেষ কারণ তাদের নিষ্ঠুরতম অত্যাচার ব্যবস্থা— যার দ্বারা তারা সকল শত্রুকে ভয় পাইয়ে দিতে সক্ষম হত। প্রাচীন বিশ্বে এদের মতো নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন আর কেউ ছিল না। বিজিত আসিরীয় সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়ে থাকা আহত শত্রু সৈন্যদের মাথাগুলো কেটে নিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করত। তার পরে প্রচণ্ড উল্লাসে তারা পৈশাচিকতার সাথে গণহত্যায় লিপ্ত হত; নগরের পর নগরে অগ্নিসংযোগ করত এবং যুদ্ধবন্দীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করত।
একজন আসিরীয় সম্রাট গর্বভরে লিখে গেছেন৷ “আমি তাদের (শত্রুর) ধন-সম্পদ, গবাদিপশু ও ভেড়াগুলি নিয়ে এলাম। অনেক বন্দীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেললাম। আমি জীবিতদের পরস্পরের উপর সাজিয়ে একটি স্তম্ভ তৈরি করলাম ও মাথাগুলি দিয়ে আর একটি স্তম্ভ নির্মাণ করলাম, শহরের প্রকাশ্য স্থানে বৃক্ষের ডালে ডালে আমি মস্তকগুলি ঝুলিয়ে দিলাম, তাদের ছেলেমেয়েদের আমি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলাম।
আমি পুরো শহরটা বিধ্বস্ত করলাম, খুঁড়ে ফেললাম, তাতে অগ্নিসংযোগ করলাম এবং সর্বশেষে নিশ্চিহ্ন করে দিলাম।” এভাবেই প্রতিটি আসিরীয় সম্রাট তাদের বিজয়াভিযান সম্পন্ন করেছিলেন। আসিরীয়দের সাফল্যের তৃতীয় কারণ তাদের শাসকদের দ্বারা নির্মিত রাষ্ট্র শাসনপদ্ধতি। আসিরীয় সম্রাটগণ বিজিত রাজ্যের প্রজাদের তাদের বাসভূমি থেকে উৎখাত করে অন্য রাজ্যে নির্বাসিত করতেন।
এভাবে এক রাজ্যের প্রজাকে অন্যরাজ্যে স্থাপন করে যদিও তারা নিষ্ঠুরতারই পরিচয় দিয়েছেন— তথাপি এভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির মিশ্রণে এক আন্তর্জাতিক সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। আসিরীয়রা একটি আন্তর্জাতিক ও কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে মিশরীয়দের থেকে উৎকৃষ্ট একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে পেরেছিল। সম্রাটের বার্তাবাহকগণ সর্বদা রাজনির্দেশ বহন করে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিত।
কেন্দ্রে সাথে প্রদেশের যোগাযোগের জন্য তৈরি হয়েছিল উৎকৃষ্ট সড়ক ও জনপথসমূহ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আসিরীয় সম্রাটগণ তাদের শাসনব্যবস্থা- তদুপরি আসিরীয়রাই তৈরি করেছিল পৃথিবীর প্রথম ডাকব্যবস্থা। এভাবে সাম্রাজ্যের সাফল্যের সাথে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আরও দেখুন :