Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

ওশেনিয়ার ইতিহাস

ওশেনিয়ার ইতিহাস

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ওশেনিয়ার ইতিহাস

ওশেনিয়ার ইতিহাস

 

 

ওশেনিয়ার ইতিহাস

অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপসমূহকে একত্রে নাম দেওয়া হয়েছে ওশেনিয়া (Oceania)। অবশ্য জাপান, ফিলিপাইন ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপসমূহকে এ হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়। আবার ওশেনিয়ার সাথে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপসমূহকে যোগ দিয়ে একত্রে অস্ট্রেলেশিয়া বলা হয়। ওশেনিয়া বলতে বোঝায় :

(১) অস্ট্রেলিয়া ও টাসমানিয়া

(2) মেলানেশিয়া দ্বীপসমূহ

(৩) মাইক্রোনেশিয়া দ্বীপসমূহ

(৪) পোলিনেশিয়া দ্বীপসমূহ।

মেলানেশিয়া নামের অর্থ কৃষ্ণ দ্বীপ দ্বীপের অধিবাসীদের কালো রঙের জন্যই এ নামকরণ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরে অবস্থিত নিউগিনি থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে ফিজি দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত দ্বীপগুলি মেলানেশিয়া নামে পরিচিত। মেলানেশিয়ার অন্তর্গত অন্যান্য দ্বীপ হল ঃ বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জ, সলোমান দ্বীপপুঞ্জ, নিউ হেব্রাইডিস দ্বীপপুঞ্জ, লয়ালটি দ্বীপপুঞ্জ ও নিউ ক্যালেডোনিয়া দ্বীপপুঞ্জ। মেলানেশিয়ার উত্তরাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে মাইক্রোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ।

মাইক্রোনেশিয়া নামের অর্থ ছোট ছোট দ্বীপ; দ্বীপগুলির ক্ষুদ্র আকৃতির জন্য এ নাম দেয়া হয়েছে। মাইক্রোনেশিয়ার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মারিয়ানাস্, ক্যারোলিনস্, মার্শাল ও গিলবার্ট দ্বীপপুঞ্জ। পোলিনেশিয়ার দ্বীপসমূহ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের বিশাল অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত। পোলিনেশিয়া নামের অর্থ হল ‘অনেক দ্বীপ’। ১৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ১১ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার মধ্যে এ দ্বীপগুলি ছড়িয়ে রয়েছে।

উত্তরে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণে নিউজিল্যান্ড ও পূর্বে ইস্টার দ্বীপ— এ তিনটিকে যোগ করলে যে ত্রিভুজের উৎপত্তি হবে, তার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিকেই পোলিনেশিয়া দ্বীপাবলী বলা হয় হাওয়াইয়ের অবস্থান হল ১৫৫ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমা ও ২০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষরেখার ছেদ বিন্দুতে এবং ইস্টার দ্বীপের অবস্থান হল চিলির পশ্চিমে ১১৯ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার উপর)।

পোলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপ হল ৪ টোঙ্গা, সামোয়া ও ফিনিক্স দ্বীপপুঞ্জ (নিউজিল্যাণ্ড-এর মোটামুটি উত্তরে অবস্থিত) এবং সোসাইটি ও মারকুইসাস দ্বীপপুঞ্জ (নিউজিল্যাণ্ডের উত্তর-পূর্ব দিকে, মাঝ প্রশান্ত মহাসাগরে)। সুপরিচিত দ্বীপ তাহিতি সোসাইটি দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত।
অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস আলোচনাকালে আমরা উল্লেখ করেছি যে, সেখানে ১৫-২০ হাজার বছর আগে শিকারি মানুষরা গমন করেছিল।

ওশেনিয়ার দ্বীপসমূহে মানুষ গিয়ে বাস স্থাপন করেছিল আরও পরে, নবোপলীয় যুগে। অস্ট্রেলিয়া ছাড়া ওশেনিয়ার সব দ্বীপেই নতুন পাথরের যুগের সংস্কৃতির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এসব সমাজে এশিয়া-ইউরোপের সভ্য সমাজের উচ্চতর সংস্কৃতি গিয়ে পৌঁছাতে পারেনি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন ইউরোপীয়রা এ সকল দ্বীপে গিয়ে পৌঁছায় তখনও ঐ সব দ্বীপবাসীরা নতুন পাথরের যুগের সংস্কৃতিতেই আবদ্ধ ছিল।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তবে ওশেনিয়ার দ্বীপবাসীরা স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী নতুন কলাকৌশল আয়ত্ত করেছিল। তারা মাছ শিকারের উন্নত কৌশল আয়ত্ত করেছিল এবং ছোট ছোট নৌকায় চড়ে সমুদ্রে বিচরণ করতে শিখেছিল। পোলিনেশীয়রা সমুদ্রের ঢেউ পর্যবেক্ষণ করে তার ভিত্তিতে সমুদ্রের মানচিত্র তৈরি করেছিল। লম্বালম্বি ও আড়াআড়ি কাঠি সাজিয়ে তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে তারা ঐ মানচিত্র তৈরি করত। এ মানচিত্র নিয়ে দিকচিহ্নহীন বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরে তারা অনায়াসে চলাফেরা করত।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে পোলিনেশিয়ার মোট লোকসংখ্যা ছিল দশ লক্ষ। কিন্তু ইউরোপীয়দের থেকে সংক্রামিত রোগে এবং তাদের অত্যাচারের ফলে ১৯০০ শতকের মধ্যেই পোলিনেশিয়ার অধিবাসীদের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ লোপ পেয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইস্টার দ্বীপ ও আরও কয়েকটি দ্বীপের সংস্কৃতি ছিল ওশেনিয়ার অন্যান্য দ্বীপের সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। বস্তুত, ইস্টার দ্বীপের সংস্কৃতির রহস্য পণ্ডিতদের খুবই আশ্চর্য করেছে।

ইস্টার দ্বীপটি কোথাও ১৫ মাইলের বেশি চওড়া নয় এবং এর আয়তন মাত্র ৪৬ বর্গমাইল। ১৭৭২ সালের ইস্টার সানডেতে (রবিবারে) যখন ওলন্দাজরা এ দ্বীপটিকে আবিষ্কার করে তখন এর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার। দ্বীপের অধিবাসীরা নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতিবই মানুষ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ দ্বীপে বহুসংখ্যক বিশাল পাথরের মূর্তি এবং নানাপ্রকার চিহ্ন খোদাই করা কাঠের ফলক পাওয়া গেছে।

বিশাল পাথরের বেদীর উপর স্থাপিত এ সকল মূর্তি ছিল ১২ থেকে ১৫ ফুট উঁচু এবং কোনো কোনো মূর্তির ওজন ছিল ৫০ টন (প্রায় ১৩৫০ মণ। এসব মূর্তি কারা তৈরি করল, কেমন করে বহন করে আনল তা এক রহস্য। মূর্তি ছাড়াও ইস্টার দ্বীপে পাথরের বাড়ি, পাথরের বেদী, আধা পিরামিডজাতীয় স্থাপত্য ইত্যাদি দেখা গেছে। স্থানীয় আদিবাসীরা বলেছিল যে, মূর্তিগুলিকে পাথরের নুড়ির উপর স্থাপন করে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হত এবং গাছের ছাল দিয়ে তৈরি দড়ির সাহায্যে টেনে দাঁড় করানো হত।

স্থানীয় লোকশ্রুতি অনুসারে, অন্যত্র থেকে তাদের পূর্বপুরুষ এসে এ দ্বীপে বাস স্থাপন করেছিল। দ্বীপটি দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত চিলি দেশটি থেকে ২ হাজার মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। আমেরিকা মহাদেশের ইন্‌কা বা আজটেক সভ্যতার দ্বারা প্রভাবিত কোনো মানুষের দল ইস্টার দ্বীপে এসে বাস স্থাপন করেছিল কি না এবং তারাই ঐ পাথরের মূর্তির সৃজক কি না সে বিষয়ে পণ্ডিতরা একমত হতে পারেননি।

ইস্টার দ্বীপের আদি অধিবাসীরা আজ বিলুপ্তির পথে। ইউরোপীয়রা সেখানে যাওয়ার একশ বছরের মধ্যে ঐ দ্বীপের আদিবাসীদের সংখ্যা ৪ হাজার থেকে কমে ১৭৫-এ এসে দাঁড়ায়। ১৮৮৮ সালে চিলি এ দ্বীপটিকে দখল করে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের এক প্রান্তে হটিয়ে দিয়ে বাকি অংশকে ভেড়ার চারণভূমিতে পরিণত করে। ১৯৫২ সালে আদিবাসীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০০ জন।

 

 

অস্ট্রেলেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়াকে বাদ দিলে বাকি থাকে তার এশীয় দ্বীপসমূহ; যথা, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ফিলিপাইন। এ সকল অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস অস্ট্রেলিয়া বা ওশেনিয়ার মতো অপরিবর্তিত থাকেনি। সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও প্রভৃতি দ্বীপে খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে প্রাচীন ভারতীয় উপনিবেশ ও প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফিলিপাইনেও প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আরও দেখুন :

Exit mobile version