Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

চিন রাজবংশ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় চিন রাজবংশ। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অধিকারী চীন পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এবং আয়তনের দিক থেকে এশিয়ার সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এর আয়তন প্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান। পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম রাষ্ট্র চীনের উত্তরে রয়েছে মঙ্গোলিয়া; উত্তর পূর্বে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া; পূর্বে চীন সাগর; দক্ষিণে ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার, ভারত, ভূটান, নেপাল; দক্ষিণ পশ্চিমে পাকিস্তান; পশ্চিমে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান ইত্যাদি রাষ্ট্র। এই বইয়ে চীনের ইতিহাস সম্পর্কে লেখা।

চিন রাজবংশ

 

 

ইতিহাসে কোন সাম্রাজ্যই সহজ স্বাভাবিকভাবে বিবর্তিত হয়ে অন্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সাম্রাজ্যগুলো অন্য কোন সাম্রাজ্য দ্বারা স্থলাভিষিক্ত হয়েছে কিংবা পরাজিত হয়ে নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীনের সাম্রাজ্যগুলোও এই বিবর্তনের নিয়মের বাইরে নয়। ব্যাম্বু অ্যানালস, ক্ল্যাসিকস অব হিস্ট্রি, ইতিহাসের আলেখ্য গ্রন্থ অনুসারে প্রাচীন চীনের প্রথম সাম্রাজ্য হল সিয়া সাম্রাজ্য। সম্রাট ইয়ু দ্য গ্রেট এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার পরে উত্তরাধিকারী হিসেবে তার পুত্র সিয়া কির সিংহাসনের আরোহণের মধ্য দিয়ে চীনে সাম্রাজ্য প্রথা শুরু হয়।

চীনের পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সিয়া সাম্রাজ্য মিংতিয়া যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয় এবং শাং সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। সিয়া সাম্রাজ্যকে চীনের প্রথম সাম্রাজ্য বলে অনুমান করা হলেও লিখিত ভাষায় বর্ণিত চীনের প্রাচীনতম সাম্রাজ্য হল শাং সাম্রাজ্য। পরবর্তী সময়ে কচ্চপের খোলসের উপর লিখিত লিপি ওরাকল হাড় থেকে এই সময়ের ইতিহাস জানা যায়। প্রাচীন চীনের তৃতীয় ও শেষ সম্রাজ্য ছিল ঝাও সাম্রাজ্য বা চৌ সাম্রাজ্য। এটি চীনের দীর্ঘতম সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য পশ্চিম ও পূর্ব দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। পূর্ব ঝাও সাম্রাজ্য আবার শরৎ বসন্ত কাল ও যুদ্ধরত রাজ্য কাল এই দুই সময়কালে বিভক্ত ছিল। যুদ্ধরত রাজ্য কালে সমগ্র চীন সাতটি রাজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

 

 

চিন রাজবংশ

২৪১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চু-রাজবংশের পতনের পর চীনে চিন বংশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। চিন-বংশের সম্রাট শি হুয়াং তি তিরিশ বছর যুদ্ধ করে বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজ্যগুলিকে নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এবং ঐক্যবদ্ধ চীনের সম্রাট হয়ে ‘প্রথম সম্রাট’ উপাধি ধারণ করেন। এ সম্রাটের আমলেই দুর্ধর্ষ বর্বর জাতিদের আক্রমণ রোধের জন্য সুবিখ্যাত চীনের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। এ প্রাচীর প্রায় ২৫০০ মাইল লম্বা ছিল।

এ প্রাচীরের উপর দিয়ে পাঁচ-ছয় জন ঘোড় সওয়ার পাশাপাশি ঘোড়া চালিয়ে যেতে পারত। প্রাচীরের মাঝে মাঝে সুরক্ষিত দুর্গ ছিল। শি হুয়াং তি অভিজাত ভুস্বামীদের কর্তৃত্ব দূর করে সমস্ত দেশকে কতগুলি প্রদেশে ভাগ করেন এবং আমলাদের সাহায্যে এক কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এ আমলারা সরাসরি সম্রাটের কাছে দায়ী থাকতেন।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ শাসনব্যবস্থা চীনের রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর স্থায়ী ছাপ রেখেছিল। চিন রাজবংশের শাসনকাল বিশেষ স্থায়ী হয়নি। চিন সম্রাটের শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ধূমায়িত হয়ে উঠলে সম্রাট দেশের ভিতরের সব অস্ত্রকে গলিয়ে ফেলেন এবং কনফুশিয়াসের সব বই ও অন্যান্য ইতিহাসের বইও পুড়িয়ে ফেলেন, কারণ কনফুশিয়াসপন্থীরাই সাবেক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছিল।

 

 

কনফুশিয়াসপন্থীদের বিরুদ্ধে চিন সম্রাট নিষ্ঠুর উৎপীড়নমূলক নীতি গ্রহণ করেন। ৪৬০ জন কনফুশিয়াসপন্থী পণ্ডিতকে তিনি জীবন্ত কবর দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও অতি দ্রুত এ রাজবংশের পতন ঘটে। ২০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিন-বংশের শাসনের অবসান ঘটে।

আরও দেখুন :

Exit mobile version