Site icon Anthropology Gurukul [ নৃবিজ্ঞান গুরুকুল ] GOLN

নবোপলীয় সংস্কৃতি

নবোপলীয় সংস্কৃতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় নবোপলীয় সংস্কৃতি। নব্যপ্রস্তরযুগ বা নবপোলিয় যুগ (Neolithic) হলো প্রস্তর যুগের শেষ সময়, যখন পাথরের অস্ত্রশস্ত্র ও ব্যবহার্য দ্রব্যাদির চরম উন্নতি সাধিত হয়েছিল। শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ থেকে। গ্রিক শব্দ Neo (নব্য নতুন) এবং Lithas (পাথর) এর সমন্বয়ে Neolithic শব্দটির সৃষ্টি। বিখ্যাত ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক Sir John Lubbock ১৮৬৫ সালে প্রথম Neolithic শব্দটি ব্যবহার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দ থেকে ২,৫০০ অব্দের মধ্যে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। প্রথাগতভাবে এই যুগ হচ্ছে প্রস্তর যুগের সমাপ্তি। প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির শেষ ধাপ হিসেবে নব্য প্রস্তর যুগ মানব সভ্যতার ভিত রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নবোপলীয় সংস্কৃতি

 

নব্যপ্রস্তর যুগ হলোসিন এপিপ্যালিওলিথিক যুগ অনুসরণ করে আসে এবং কৃষিকাজের সূচনাকালে নবপোলীয় বিপ্লব ঘটে এবং এই সময়টাই নব্যপ্রস্তর যুগের শুরু। ধাতুর ব্যবহার শুরু হলে এই যুগ শেষ হয় এবং ব্রোঞ্জ যুগ, তাম্র যুগ এবং কোনো কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলে লৌহ যুগ শুরু হয়। এই যুগে মানুষের আচরণ এবং সংস্কৃতিতে প্রগতি এবং পরিবর্তন দেখা যায়, যার মধ্যে ছিল বন্য ও গৃহজাত শস্যের ব্যবহার এবং বন্য পশুকে গৃহপালিত পশুতে রূপান্তর। ধারণা করা হয় যে, নব্যপ্রস্তর যুগ শুরু হয় লেভ্যান্টে (জেরিকো, বর্তমানে পশ্চিম তীর) খ্রিস্টপূর্ব ১০,২০০ – ৮,৮০০ অব্দে।

পণ্ডিতদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে তামার ব্যবহার মানুষের মধ্যে লক্ষ করা যায়। সে হিসেবে এ সময়কালকে প্রাচীন মানব সভ্যতার ইতিহাসে তাম্রযুগ বলে অভিহিত করা হয়। আনুমানিক ৮০০০-৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দের মধ্যে নিকট প্রাচ্যে নব্য প্রস্তর যুগের প্রথম বিকাশ ঘটে। অতঃপর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং অবশেষে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে ইংল্যাণ্ডে এ যুগের সূচনা হয়। এ যুগের প্রধান কৃতিত্ব হলো মসৃণ, হালকা কিন্তু অধিক কার্যক্ষম যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার, কৃষি আবিষ্কার ও স্থায়ী গ্রামীণ জীবনের সূত্রপাত, পশু পাখি গার্হস্থ্যকরণ এবং মৃৎ শিল্পের উৎপাদন। এ যুগে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে আসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বস্তুত প্রাগৈতিহাসিক যুগে কৃষি আবিষ্কারই ছিল মানব জাতির সর্বাপেক্ষা বড় সাফল্য।

 

নবোপলীয় সংস্কৃতি

আমেরিকা মহাদেশে নবোপলীয় বা নতুন পাথরের যুগের কৃষি সংস্কৃতিরও সন্ধান পাওয়া গেছে। পুরাতন-পৃথিবীতে আমরা যে অর্থে পুরোপলীয় ও নবোপলীয় সংস্কৃতি কথাটা ব্যবহার করি, নতুন পৃথিবীতে (আমেরিকা মহাদেশে। ঠিক সে অর্থে কথাটাকে ব্যবহার করা চলে না।

পুরাতন-পৃথিবীতে বহু লক্ষ বছর ধরে শিকারী যুগের বিকাশ ও বিবর্তন ঘটেছে। তারপর আফ্রিকা ও ইউরেশিয়া মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃত পরিসরের পটভূমিতে পশ্চিম এশিয়ায় নবোপলীয় সংস্কৃতি জন্ম নিয়েছে মাত্র দশ হাজার বছর আগে। অথচ আমেরিকা মহাদেশে দেখা যায় যে, অল্প কয়েক হাজার বছরের মধ্যে সেখানে অল্প পরিসর স্থানের মধ্যেই প্রথমে শিকারি সংস্কৃতি ও তারপর কৃষি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে।

মনে হয় যেন পুরাতন-পৃথিবীতে যা কয়েক লক্ষ বছর ধরে ঘটেছিল। তাই যেন আমেরিকাতে সংক্ষিপ্ত স্থানিক ও কালিক পরিসরে ঘটেছে। এ সকল লক্ষণ বিচার করলে মনে হয় যেন আমেরিকাতে নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতি এশিয়া থেকেই বিস্তার লাভ করেছে। কারণ অল্পকালের মধ্যেই আমেরিকার শিকারি মানুষরা স্বতন্ত্রভাবে কৃষি সংস্কৃতির আবিষ্কার করেছিল এ কথা মেনে নেওয়া কঠিন। অনেক পণ্ডিত তাই মনে করেন যে, আমেরিকাতে নবোপলীয় কৃষি সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছিল এশিয়া থেকে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আমরা যদি মনে রাখি যে, বহু হাজার বছর ধরে এশিয়া থেকে বিভিন্ন দলে মানুষ আমেরিকাতে গিয়েছিল। তাহলে পণ্ডিতদের উপরোক্ত অভিমতকে নিতান্ত অসম্ভব মনে হবে না। অবশ্য এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কঠিন, কারণ অনেক পণ্ডিত আবার মনে করেন যে, আমেরিকার আদিম মানুষরা কোনো রকম বাইরের প্রভাব ছাড়া নিজেরাই কৃষি সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটিয়েছিল।

আমেরিকা-মহাদেশের আদিবাসীদের মধ্যে অবশ্য শিকারি সংস্কৃতির মতো কৃষি সংস্কৃতি ততখানি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে এবং ক্যানাডার দক্ষিণাঞ্চলে ইরোক্য উপজাতির লোকেরা শিকার এবং কৃষি উভয় সংস্কৃতিই আয়ত্ত করেছিল। তবে কৃষি সংস্কৃতিতে সবচেয়ে অগ্রসর হয়েছিল যারা, তারা হল পুয়েলো উপজাতির মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এ পুয়েবলো গ্রাম সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। পুয়েবলো নবোপলীয় সংস্কৃতির মানুষরা পাহাড়ের গায়ের জমিতে সুন্দরভাবে চাষ করতে পারত। পুয়েবলোরা ভুট্টা ও অন্যান্য শস্য এবং তুলার চাষ করত। আমেরিকায় আদিমকালে কোথাও গম বা ধানের চাষ হত না। যেখানেই কৃষিকাজ হত, সেখানেই খাদ্যশস্য ছিল ভুট্টা। এ ছাড়া অনেক জায়গায় আলুর চাষও হত। (পুরাতন-পৃথিবীতে আলু ও ভুট্টার প্রচলন আমেরিকা থেকেই হয়েছিল)।

 

 

পুয়েবলোরা গিরিখাতে এবং পাহাড়ের গায়ে পাশাপাশি ঘর বানিয়ে এবং গ্রাম হিসাবে সংগঠিত হয়ে বাস করত। মায়া, আজটেক প্রভৃতি উচ্চতর সভ্যতার কথা বাদ দিলে, পুয়েবলো মানুষরা ছিল আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে অগ্রসর কৃষিজীবী। মায়া, আজটেক ও ইন্‌কা জাতিসমূহও অবশ্য কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির নির্মাণ করেছিল, কিন্তু তাদের সভ্যতা ছিল অনেক উচ্চস্তরের! প্রায় মিশর ব্যবিলনের ব্রোঞ্জযুগের সভ্যতার সমতুল্য। আমরা তাই এ সকল সভ্যতার পরিচয় পৃথকভাবে প্রদান করব।

আরও দেখুন :

Exit mobile version